সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

৫০ তম জন্মদিন ও স্বামীজির Strength is Life, Weakness is Death.


রাত ১২-০১। কালের খেয়ায় পাড়ি দিয়ে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আরো একটি বছর। শচীনের চার কিংবা ছক্কা হাকিয়ে নয়,ঘণ্টা-দিন-মাস পেড়িয়ে আমিও জীবনের Half Century করার গৌরব অর্জন করলাম। মহাকালের হিসাবে ৫০ বছর খুবই সামান্য সময়, ক্ষণিক মাত্র। কিন্তু জীবনের ক্ষেত্রে অর্ধ শতাব্দী একটি অসাধারণ মাইলস্টোন। যাপিত জীবনের নির্মোহ আত্ম মূল্যায়নে যেমনি রয়েছে প্রাপ্তির আনন্দ, তেমনি আছে চ্যালেঞ্জ। কারণ এসময়ে সকল ভাল এবং ব্যতিক্রমী উদ্যোগগুলো এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সকলের অকুন্ঠ সমর্থন, অকৃতিম ভালবাসা এবং আন্তরিক সহযোগিতার কথা বিবেচনা করলে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তির তালিকাটি অনেক দীর্ঘ। তবে অচলায়তন ভেংগে সমাজ জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখানো-শিব খেরার ভাষায় Absulately it’s a big challenge.

আইনস্টাইনের ৫০ তম জন্মদিন। শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠিয়েছেন সিগমন্ড ফ্রয়েড। কার্ডে ফ্রয়েড আইনস্টাইন কে সম্বোধন করেছেন You are lucky one বলে। আইনস্টাইন বুঝতে পারছিলেন না ফ্রয়েডের মত খ্যাতিমান মানুষ কেন তাঁকে ভাগ্যবান মনে করছেন। ফ্রয়েডকে চিঠি লিখলেন আইনস্টাইন, আপনি যেখানে এত মানুষের মনের খবর জানতে পারেন, সমগ্র মানবজাতি যেখানে আপনাকে মনে রাখছে, সেখানে আপনার তুলনায় আমি কীভাবে ভাগ্যবান হলাম ? উত্তরে ফ্রয়েড লিখলেন পদার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের গভীর ধারণা নেই তারা কখনো সাহস পাবে না তোমার কাজের সমালোচনা করার । অথচ আমাকে দেখো মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে যারা কিছুই জানেনা তারাও আমার কাজের বড় সমালোচক। এক্ষেত্রে তুমি কি ভাগ্যবান নও? আমি একা নই আমতলীর ভাল এবং সুস্থ চিন্তার মানুষগুলোই বোধ করি ফ্রয়েডের মত কম ভাগ্যবান। কারণ এ অঞ্চলের প্রাচীন ও সম্ভাবনাময়ী জনপদ আমতলী। কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক মন-মানসিকতা, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বের সংকট বার বার আমতলীকে পিছিয়ে দিয়েছে। ১৯৬৫ সনে ডা: ফজলুর রহমান পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে বরগুনার পরিবর্তে আজকে আমতলীই হত জেলা। ১৯৭৯ সনে সংসদ নির্বাচনে মরহুম নিজাম উদ্দিন আহমেদ পরাজিত না হলে আমতলীর উন্নয়নের ইতিহাস হয়ত ভিন্নভাবে লেখা হত। শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে, ষড়যন্ত্র করেই আমরা তাদেরকে পরাজিত করেছি। এখনো সে প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। আমরা যাত্রা -জুয়া -টেন্ডার -কাবিখা -কাবিটা ভাগাভাগির মত ব্যক্তি স্বার্থে দল-মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হলেও ছোট খাটো বিষয়গুলো বাদই দিলাম সুবন্ধি সমস্যা সমাধান, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস এবং জেলার দাবীর মত বৃহৎ স্বার্থেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। 

বর্তমান সময়ে দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা, উন্নয়ন কর্মকান্ড তার Gate way হচ্ছে আমতলী। আমতলীকে এই উন্নয়ন ধারার সাথে সমানতালে এগিয়ে নিতে হলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমতলীর সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আমতলীকে জেলায় উন্নীত করা এখন সময়ের দাবী । আর এজন্য প্রয়োজন একটি কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা (Strategic Road Map), গতিশীল নেতৃত্ব (Dynamic Leadership) ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা । এক্ষেত্রে আমতলীর তরুণ সমাজ, আমতলীর নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্ন, উন্নয়নের রুপকল্প (Vision) তুলে ধরা গেলে, দৃশ্যমান (Visualize) করা গেলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, তারা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসবে । আসুন আমরা তরুণ প্রজন্মকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাই, পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করি । রবীন্দ্রনাথের চির সবুজের বাণী, সুরের আগুন সবখানে ছড়িয়ে দিতে পারলেই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পি.ভি নরসিমা রাওয়ের মত আমরাও চিৎকার করে বলতে পারব, None can Stop us.

বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক বলয় এবং ক্ষমতা কাঠামো ভেংগে নতুন প্রজন্মকে ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখানো এবং পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। তবে তা কোনভাবেই মুসা ইব্রাহিম কিংবা নিশাদ মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের মত কঠিন নয় বলে আমরা কতিপয় স্বপ্নবাজ মানুষ চ্যালেঞ্জ নিয়েই স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন দেখানোর কাজটি শুরু করেছি। এ স্বপ্ন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা নয় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের ঘুমোতে না দেয়ার স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতে গিয়ে এবং দেখাতে গিয়ে হাল ভাংগা নাবিকের মত প্রায়শই আমরা হোঁচট খাচ্ছি আবার নতুনভাবে শুরু করছি আমাদের সাহসী অভিযাত্রা। কারণ আমরা জানি- স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিখ্যাত বানী- Strength is Life, Weakness is Death. 

মাত্র দু’দিন আগে আমাদেরকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে খুব অল্প বয়সে চলে গেছেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। দু:সময়ে কিংবা কঠিন ঝড় তুফানে কবির সুমনের ‘হাল ছেড়না বন্ধু বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে’ গানটির মত আসিফ ইকবালের লেখা আইয়ুব বাচ্চুর একটি গান খুব মনে পড়ে-তুমি ভয় পেওনা, তুমি থেমে যেওনা। আল্লামা ইকবাল আরেকধাপ এগিয়ে বলেছেন, আমি তাকেই খুজি, ভয় না পেয়ে স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে যে স্রোতের গতিকে বদলে দেয়ার সাহস রাখে । 

৫০ তম জন্মদিনে আমতলীর তরুণ প্রজন্মের কাছে, স্বপ্নবাজ মানুষদের কাছে আমার অনুরোধ -আসুন আমরা সকল ভয়কে জয় করে দান্তের ভাষায় সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যাই। আমরা তো জানি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রাত যত গভীরই হোক রাতের অন্ধকার বিদীর্ণ করে সকালের সূর্য উঠবেই। সব্বে সত্তা সুখিতা ভবান্তু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মামনির জন্মদিন: স্বপ্নের চেয়েও বড় হও।

১৯২৮ সন। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু তখন এলাহবাদে। আর ১০ বছরের ইন্দিরা গান্ধী থাকেন হিমালয়ের কোলঘেসে মূসৌরী শহরে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম চিঠি। নেহেরু প্রায়ই মেয়েকে চিঠিতে প্রকৃতি, পৃথিবী ও মানব সভ্যতার বিকাশসহ ভারতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখতেন। ১৯২৯ সনের নভেম্বর মাসে এসব চিঠি নিয়ে মা-মনিকে-বাবা নামে একটি বই প্রকাশিত হলে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় । বর্তমানে এটি ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে এবং রেফারেন্স বুক হিসাবে পড়ানো হয়।কুটনৈ তিক ফারুক চৌধুরীর কুটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা প্রিয় ফারজানাও আমাদের ভ্রমন সাহিত্য ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রত্যেক পিতাই দূরে থাকা সন্তানদের প্রতি কিছু পরামর্শ, কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আগে চিঠি লিখত,এখন তার জায়গায় ইমেইল, মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ।এজন্য নির্দেশনাটাও বেশী । এটা কর, ওটা কর না । সন্ধ্যার আগেই বাসায় বা হলে ফের। রাত কর না। রাজনীতিতে জড়িও না, কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যেও না। কারন অভিভাবকরা সব সময় সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, মেয়ে হলে তো কথাই নেই । সন্তানরা হয়ত ভাবে, আমরা বড় হয়েছি এত ট...

শুভ জম্মদিন ও একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্প ।।

The Wright Brothers  প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির উড়া দেখতেন। দেখতে দেখতে এক সময় পাখির মত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একদিন তাদের স্বপ্ন সফল হল। পাখি হয়ে আকাশে উড়ে নয়, উড়োজাহাজ আবিস্কার করে আকাশ উড়ে। প্রতিটি জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বপ্ন বা vision জীবনকে guide করে, স্বপ্ন ছাড়া জীবন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার মত। তবে এ স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা নয়। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের মতে স্বপ্ন সেটাই যেটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে ঘুমাতে দেয় না। স্বপ্ন দেখানো আরো কঠিন কাজ। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার সারাটা জীবন জুরেই স্বপ্ন ফেরী করেছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ বক্তৃতা আর লেখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড: জাফর ইকবাল। আমাদের সমাজ জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিদিন  Social Media, পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে, চ্যানেলে সাক্ষাতকার, কমিউনিটি রেডিওর টক শোতে এমনকি মাঠে ঘাটে সভা সমাবেশ আর উঠান বৈঠকে যে মানুষটি এ অঞ্চলের তরুন প্রজম্মকে দিন বদলের কথা বলছেন, ...

সুবন্ধি বাধ, একজন জেলা প্রশাসক ও খালের দুপাড়ের অভাগা ৮০ হাজার মানুষ।।

বরগুনা জেলার সকল পর্যায়ের মানুষের খুব  মন খারাপ। ব্যক্তিগতভাবে আমারও। বরগুনা জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক, সাধারণ মানুষের খুব কাছের ব্যক্তি  ড: মুহা: বশিরুল আলম চলে গেছেন। বিভিন্ন  মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে জেলা প্রশাসকের চলে যাওয়ার খবর এখন সুবন্ধি খালের দুপাড়ের ৮০ হাজার মানুষের মুখে মুখে। অনেকদিন ঢাকায় ছিলাম। আজকে অফিসেই দেখা হল চন্দ্রা, কাউনিয়া, লোদা এবং মহিষডাঙ্গার কয়েকজনের সাথে। দেখলাম তাদেরও খুব মন খারাপ। ২০০৮ সন থেকে সুবন্ধি বাধের কারনে আমতলী উপজেলার আমতলী, চাওড়া, হলদিয়া ইউনিয়ন  ও আমতলী পৌরসভার প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কৃষি, পণ্য পরিবহন, জীবন জীবিকা এমনকি পানি ব্যবহার সংক্রান্ত দৈনন্দিন কাজ কর্ম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ সংবাদ শুনে জেলা প্রশাসক স্যার শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি নিজের চোখে সমস্যা দেখেছেন,ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছেন,সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার জন্য মিডিয়া, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে একাধিক বার মতবিনিময় সভা করেছেন। Citizen's  Voice -Barguna এবং Public Service  Innovation Bangladesh এ তুলে ধরে ...