সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হলুদ সাংবাদিকতা , যোশেফ পুলিৎজার এবং আমেরিকা-স্পেন যুদ্ধ

গত কয়েকদিন ধরে পিভিএতে সাংবাদিকতা, নাগরিক সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। গ্রুপ সদস্যরাও অলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন এবং অম্ল-মধূর বাক্য ব্যয় করছেন। কারো কারো আলোচনায় মনে হয় সাংবাদিকরাই নাটের গুরু। ভাবখানা এরকম-যত দোষ নন্দ ঘোষ। আর সাংবাদিকদের গালি দেয়ার জন্য এ যাবত সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করা শব্দ যুগল হচ্ছে হলুদ সাংবাদিকতা।

সাংবাদিকতা করছেন কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা শব্দ যুগল কখনো শোনেননি এরকম কেউ আছেন বলে আমার মনে হয় না । পেশাগত কাজে না শুনলেও সাংবাদিকদের গালি গালাজ করার জন্য রাজনৈতিক নেতা বা উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তারা অহরহ হলুদ সাংবাদিকতা শব্দটি ব্যবহার করছেন আর তাদের গালি গালাজ শুনতে শুনতে আমার বিশ্বাস প্রত্যেক সাংবাদিকের এ শব্দটি মুখস্থ হয়ে গেছে । কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা কি, কেনই বা সংবাদপত্রে পরিভাষার উদ্ভব হলো আর কেনইবা এতো রং থাকতে হলুদকেই বেছে নেয়া হলো এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের পিভিএর আয়োজন।

হলুদ সাংবাদিকতা কি
উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকেই হলুদ সাংবাদিকতা বলে । এ ধরনের সাংবাদিকতায় তথ্যানুসন্ধান না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হল সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো বা চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা বাড়ানো। অর্থাৎ হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকর্ষনীয় শিরোনাম ব্যবহার করা, সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা, কেলেংকারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি ইত্যাদি।

হলুদ সাংবাদিকতার নামকরণ
যোশেফ পুলিৎজার এবং উইলিয়াম হিয়ার্টজ দুজনই খ্যাতিমান সাংবাদিক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এ খ্যাতিমান সাংবাদিকদের অনৈতিক প্রতিযোগিতার কারনেই আজকে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছে Yellow Journalusm বা হলুদ সাংবাদিকতা পরিভাষাটি। হলুদ সাংবাদিকতা এই পরিভাষাটির নামকরণ করেন নিউইয়র্ক সানের সম্পাদক চার্লস এ. ডেনা।

হলুদ শিশু থেকে হলুদ সাংবাদিকতা
The Pulitzer Award এর প্রতিষ্ঠাতা যোশেফ পুলিৎজার হাঙ্গেরীর নাগরিক। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সুত্রে তিনি স্থায়ী হন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৮৮৩ সালে পুলিৎজার জে গোল্ডের কাছ থেকে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ক্রয় করেন। পুলিৎজারের মানবধর্মী, কৌতুহল উদ্দীপক গল্প, রটনা এবং সাংবাদিকতার নতুন কলাকৌশলের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পত্রিকাটি খ্যাতির শিখরে পৌছে। অন্যদিকে জন্মসূত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন হিয়ার্টজ। ১৮৯৫ সালে তিনি নিউইয়র্ক জার্নাল পত্রিকাটির মালিকানা ক্রয় করে জড়িয়ে যান পুলিৎজারের সাথে এক ভয়ানক যুদ্ধে।

নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড পত্রিকায় কমিক স্ট্রিপ ছাপা হতো। অল্প সময়েই অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কমিক স্ট্রিপের নাম ছিল ‘হোগান’স অ্যালি’ যার কার্টুনিস্ট ছিলেন রিচার্ড এফ. আউটকল্ট। । কয়েকটি শিশুকে নিয়েই মূলত এই কমিক স্ট্রিপ। এই শিশুদের একজনের শরীরের রং ছিল Yellow বা হলুদ। এই হলুদ বর্ণের শিশুই ছিল কমিক স্ট্রিপের মুল চরিত্র। সাম্প্রতিক বিষয়গুলোকেই স্যাট্যায়ার করে তুলে ধরে সে ব্যঙ্গাত্মক কথা বলতো। শরীরের রং হলুদ হওয়ার কারনে তাকে ডাকা হতো ‘Yellow Kid নামে। হিয়ার্টজও তার পত্রিয়ায় এই কমিক স্ট্রিপ ছাপানো শুরু করেন এবং চড়া মুল্যে ‘হোগ্যান’স অ্যালি’র কার্টুনিস্ট রিচার্ড এফ. আউটকল্টকে নিউইয়র্ক জার্নালে নিয়ে আসেন। শুরু হয়ে যায় দুই পত্রিকা এবং দুই মালিকের মধ্যে এক ভয়ানক প্রতিযোগিতা। তারা একে অন্যকে আক্রমণ করেও কার্টুন প্রকাশ করে যেতে লাগলেন। আর এই ইয়েলো কিডকে কেন্দ্র করেই পুলিৎজার এবং হিয়ার্টজের মধ্যে শুরু হয় এক ভয়ানক যুদ্ধ। যার ফলে সৃষ্টি হয় Yellow Journalism বা হলুদ সাংবাদিকতা।

আমেরিকা -স্পেন যুদ্ধ
১৮৯৬ সাল। হলুদ সাংবাদিকতা তখন তুঙ্গে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান করছিল কিউবার হ্যাভেনাতে। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত যুদ্ধ জাহাজটি ডুবে যায়। নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড, নিউইয়র্ক জার্নালসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা এর দায় চাপিয়ে দেয় স্পেনের উপর। যদিও এই ঘটনার সাথে স্পেনের কোনরকম সম্পৃক্ততা ছিল না। পত্রিকাগুলোর একের পর এক মিথ্যা সংবাদে যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হয় স্পেন আক্রমণে। দু দেশের মধ্যে বেঁধে যায় ভয়ানক যুদ্ধ।

People's Voice of Amtali -PVA নাগরিক সাংবাদিকতায় উদ্ধুদ্ধ করছে এবং আমরা সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলায় বিশ্বাসী। আসুন ভুল তথ্য দিয়ে,রং ঢং মাখিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট না করি। উপরন্ত সৎ সাহসী এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এবং এ অঞ্চলের সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরে নাগরিকের জন্য Right to information এবং অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করি ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মামনির জন্মদিন: স্বপ্নের চেয়েও বড় হও।

১৯২৮ সন। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু তখন এলাহবাদে। আর ১০ বছরের ইন্দিরা গান্ধী থাকেন হিমালয়ের কোলঘেসে মূসৌরী শহরে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম চিঠি। নেহেরু প্রায়ই মেয়েকে চিঠিতে প্রকৃতি, পৃথিবী ও মানব সভ্যতার বিকাশসহ ভারতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখতেন। ১৯২৯ সনের নভেম্বর মাসে এসব চিঠি নিয়ে মা-মনিকে-বাবা নামে একটি বই প্রকাশিত হলে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় । বর্তমানে এটি ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে এবং রেফারেন্স বুক হিসাবে পড়ানো হয়।কুটনৈ তিক ফারুক চৌধুরীর কুটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা প্রিয় ফারজানাও আমাদের ভ্রমন সাহিত্য ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রত্যেক পিতাই দূরে থাকা সন্তানদের প্রতি কিছু পরামর্শ, কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আগে চিঠি লিখত,এখন তার জায়গায় ইমেইল, মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ।এজন্য নির্দেশনাটাও বেশী । এটা কর, ওটা কর না । সন্ধ্যার আগেই বাসায় বা হলে ফের। রাত কর না। রাজনীতিতে জড়িও না, কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যেও না। কারন অভিভাবকরা সব সময় সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, মেয়ে হলে তো কথাই নেই । সন্তানরা হয়ত ভাবে, আমরা বড় হয়েছি এত ট...

শুভ জম্মদিন ও একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্প ।।

The Wright Brothers  প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির উড়া দেখতেন। দেখতে দেখতে এক সময় পাখির মত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একদিন তাদের স্বপ্ন সফল হল। পাখি হয়ে আকাশে উড়ে নয়, উড়োজাহাজ আবিস্কার করে আকাশ উড়ে। প্রতিটি জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বপ্ন বা vision জীবনকে guide করে, স্বপ্ন ছাড়া জীবন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার মত। তবে এ স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা নয়। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের মতে স্বপ্ন সেটাই যেটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে ঘুমাতে দেয় না। স্বপ্ন দেখানো আরো কঠিন কাজ। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার সারাটা জীবন জুরেই স্বপ্ন ফেরী করেছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ বক্তৃতা আর লেখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড: জাফর ইকবাল। আমাদের সমাজ জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিদিন  Social Media, পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে, চ্যানেলে সাক্ষাতকার, কমিউনিটি রেডিওর টক শোতে এমনকি মাঠে ঘাটে সভা সমাবেশ আর উঠান বৈঠকে যে মানুষটি এ অঞ্চলের তরুন প্রজম্মকে দিন বদলের কথা বলছেন, ...

সুবন্ধি বাধ, একজন জেলা প্রশাসক ও খালের দুপাড়ের অভাগা ৮০ হাজার মানুষ।।

বরগুনা জেলার সকল পর্যায়ের মানুষের খুব  মন খারাপ। ব্যক্তিগতভাবে আমারও। বরগুনা জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক, সাধারণ মানুষের খুব কাছের ব্যক্তি  ড: মুহা: বশিরুল আলম চলে গেছেন। বিভিন্ন  মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে জেলা প্রশাসকের চলে যাওয়ার খবর এখন সুবন্ধি খালের দুপাড়ের ৮০ হাজার মানুষের মুখে মুখে। অনেকদিন ঢাকায় ছিলাম। আজকে অফিসেই দেখা হল চন্দ্রা, কাউনিয়া, লোদা এবং মহিষডাঙ্গার কয়েকজনের সাথে। দেখলাম তাদেরও খুব মন খারাপ। ২০০৮ সন থেকে সুবন্ধি বাধের কারনে আমতলী উপজেলার আমতলী, চাওড়া, হলদিয়া ইউনিয়ন  ও আমতলী পৌরসভার প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কৃষি, পণ্য পরিবহন, জীবন জীবিকা এমনকি পানি ব্যবহার সংক্রান্ত দৈনন্দিন কাজ কর্ম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ সংবাদ শুনে জেলা প্রশাসক স্যার শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি নিজের চোখে সমস্যা দেখেছেন,ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছেন,সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার জন্য মিডিয়া, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে একাধিক বার মতবিনিময় সভা করেছেন। Citizen's  Voice -Barguna এবং Public Service  Innovation Bangladesh এ তুলে ধরে ...