সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আবদুর রব :একজন জনপ্রিয় শিক্ষকের বড় অসময়ে প্রস্থান।।

মৃত্যু অনিবার্য। আজ হোক, কাল হোক আমাদের সবাইকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। কিন্ত কোন কোন মৃত্যু আমাদেরকে খুব কাদায়, ব্যথিত করে। কবি লুসুন এজন্যই বলেছিলেন কোন কোন মৃত্যু থাই পাহাড়ের মত ভারী, কোন কোন মৃত্যু হাসের পালকের মত হালকা । 

সৈয়দ আবদুর রউফ। আমাদের কাছে রব বিএসসি হিসাবে পরিচিত। ১৯৮৭ সনে আমতলী এম. ইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিএসসি শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর থেকে দীর্ঘদিন তার কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে জায়গা করে নেন সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে । আমি তার নামাজে জানাযায় ছিলাম এবং আজকের শোক সভায়ও উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। কতটা জনপ্রিয় হলে এরকম মানুষের ঢল নামে, কতটা ভালবাসলে মানুষের হ্নদয় থেকে এরকম স্বত:স্ফুর্ত অভিব্যক্তি তা বুঝবার অপেক্ষা রাখে না। তার অকাল প্রস্থান যেমনি আমাদেরকে কাদিয়েছে তেমনি তারমত একজন দক্ষ শিক্ষকের অনুপস্থিতি এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন একজন মানুষের শুন্যতা আমাদের মধ্যে নতুন ভাবনা তৈরী করেছে।

গত আগস্ট মাসে কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে বসছিলাম, কথা বলছিলাম সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি, মাল্টি মিডিয়া ক্লাশরুম, Corporal Punishment এবং শিক্ষার্থীদের internet /Social Media ব্যবহারসহ বিভিন্ন সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে। আলোচনায় আমি অভিভুত হয়েছি রব ভাই খুব জোরালোভাবে সবগুলো বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করেছেন এবং যুক্তি দিয়ে অন্যদের চিন্তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন । তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমরা গত সেপ্টেম্বর মাসে People's Voice of Amtali -PVA নামে একটি গ্রুপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম। তার অংশগ্রহণ এবং অসাধারণ বক্তৃতা শুধু তরুণদেরই উদ্ধুদ্ধ করেনি, ব্যক্তিগতভাবে আমিও উজ্জীবিত হয়েছি। তিনি তরুণদের অনুরোধ করছেন,বয়সে আমি সিনিয়র হলেও মনের দিক থেকে আমি এখনো নিজেকে চির তরুণ মনে করি, সেদিক বিবেচনা করে তোমরা এরকম ভাল কাজে আমাকে সাথে রেখ। আমি বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের সাথে ছিলেন এবং আগামী দিনগুলোতে তার চিন্তা PVA এর এডমিনদের অনুপ্রাণিত করবে। নোয়াম চমোস্কি বর্তমান সময়ে একজন পরিচিত এবং প্রথা বিরোধী দার্শনিক। তিনি মনে করেন বর্তমান সময়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক একটি ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে।গুরু- শিষ্য সম্পর্কের পরিবর্তে আজকে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক বন্ধুত্বে রুপ নিয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে তার বক্তাব্যও প্রথা বিরোধী হলেও সময়োপযোগী। তবে অনেক শিক্ষকরাই এই পরিবর্তনকে ধারণ করতে পারেনি। গতানুগতিক শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে একদিকে তারা শিক্ষার্থীদের Psycology বুঝতে পারছেন না,অন্যদিকে গুনগত শিক্ষা বিস্তারে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারছে না। তবে তারমধ্যেও আমতলীর যে কজন শিক্ষক পরিবর্তনকে ধারণ করে গুনগত শিক্ষা বিস্তারে ইতিবাচক ভুমিকা রেখেছেন,প্রয়াত রব বিএসসি তাদের অন্যতম। এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, আরো বিকশিত করার জন্য বর ভাইয়ের উপস্থিতি আরো কিছুদিন খুব প্রয়োজন ছিল।খুব অসময়ে তার প্রস্থান এম. ইউ স্কুলতো বটেই আমতলীর গুনগত শিক্ষা বিস্তার,নতুন ধারার ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের জায়গায় অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।কারন একজন শিক্ষক একজন দার্শনিক।তিনি যদি শিক্ষার্থীর Psychology বুঝে তাকে guide করতে পারেন, তাহলে অমিত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব।

গত ৩০ বছর ধরে আমার চেনা একজন দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক, ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষের অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমি তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।আসুন আমরা সবাই দোয়া করি তার পরিবার যেন এই শোক সইতে পারে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মামনির জন্মদিন: স্বপ্নের চেয়েও বড় হও।

১৯২৮ সন। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু তখন এলাহবাদে। আর ১০ বছরের ইন্দিরা গান্ধী থাকেন হিমালয়ের কোলঘেসে মূসৌরী শহরে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম চিঠি। নেহেরু প্রায়ই মেয়েকে চিঠিতে প্রকৃতি, পৃথিবী ও মানব সভ্যতার বিকাশসহ ভারতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখতেন। ১৯২৯ সনের নভেম্বর মাসে এসব চিঠি নিয়ে মা-মনিকে-বাবা নামে একটি বই প্রকাশিত হলে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় । বর্তমানে এটি ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে এবং রেফারেন্স বুক হিসাবে পড়ানো হয়।কুটনৈ তিক ফারুক চৌধুরীর কুটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা প্রিয় ফারজানাও আমাদের ভ্রমন সাহিত্য ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রত্যেক পিতাই দূরে থাকা সন্তানদের প্রতি কিছু পরামর্শ, কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আগে চিঠি লিখত,এখন তার জায়গায় ইমেইল, মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ।এজন্য নির্দেশনাটাও বেশী । এটা কর, ওটা কর না । সন্ধ্যার আগেই বাসায় বা হলে ফের। রাত কর না। রাজনীতিতে জড়িও না, কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যেও না। কারন অভিভাবকরা সব সময় সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, মেয়ে হলে তো কথাই নেই । সন্তানরা হয়ত ভাবে, আমরা বড় হয়েছি এত ট...

শুভ জম্মদিন ও একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্প ।।

The Wright Brothers  প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির উড়া দেখতেন। দেখতে দেখতে এক সময় পাখির মত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একদিন তাদের স্বপ্ন সফল হল। পাখি হয়ে আকাশে উড়ে নয়, উড়োজাহাজ আবিস্কার করে আকাশ উড়ে। প্রতিটি জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বপ্ন বা vision জীবনকে guide করে, স্বপ্ন ছাড়া জীবন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার মত। তবে এ স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা নয়। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের মতে স্বপ্ন সেটাই যেটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে ঘুমাতে দেয় না। স্বপ্ন দেখানো আরো কঠিন কাজ। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার সারাটা জীবন জুরেই স্বপ্ন ফেরী করেছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ বক্তৃতা আর লেখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড: জাফর ইকবাল। আমাদের সমাজ জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিদিন  Social Media, পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে, চ্যানেলে সাক্ষাতকার, কমিউনিটি রেডিওর টক শোতে এমনকি মাঠে ঘাটে সভা সমাবেশ আর উঠান বৈঠকে যে মানুষটি এ অঞ্চলের তরুন প্রজম্মকে দিন বদলের কথা বলছেন, ...

সুবন্ধি বাধ, একজন জেলা প্রশাসক ও খালের দুপাড়ের অভাগা ৮০ হাজার মানুষ।।

বরগুনা জেলার সকল পর্যায়ের মানুষের খুব  মন খারাপ। ব্যক্তিগতভাবে আমারও। বরগুনা জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক, সাধারণ মানুষের খুব কাছের ব্যক্তি  ড: মুহা: বশিরুল আলম চলে গেছেন। বিভিন্ন  মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে জেলা প্রশাসকের চলে যাওয়ার খবর এখন সুবন্ধি খালের দুপাড়ের ৮০ হাজার মানুষের মুখে মুখে। অনেকদিন ঢাকায় ছিলাম। আজকে অফিসেই দেখা হল চন্দ্রা, কাউনিয়া, লোদা এবং মহিষডাঙ্গার কয়েকজনের সাথে। দেখলাম তাদেরও খুব মন খারাপ। ২০০৮ সন থেকে সুবন্ধি বাধের কারনে আমতলী উপজেলার আমতলী, চাওড়া, হলদিয়া ইউনিয়ন  ও আমতলী পৌরসভার প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কৃষি, পণ্য পরিবহন, জীবন জীবিকা এমনকি পানি ব্যবহার সংক্রান্ত দৈনন্দিন কাজ কর্ম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ সংবাদ শুনে জেলা প্রশাসক স্যার শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি নিজের চোখে সমস্যা দেখেছেন,ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছেন,সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার জন্য মিডিয়া, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে একাধিক বার মতবিনিময় সভা করেছেন। Citizen's  Voice -Barguna এবং Public Service  Innovation Bangladesh এ তুলে ধরে ...