সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমতলীর উন্নয়ন বিতর্ক, আমার কিছু কথা ও কিছু জিজ্ঞাসা।



গত কয়েকদিন ধরে আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং কয়েকটি সভায় দেয়া বক্তৃতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে। হোটেল রেস্তোরায় আলোচনা - সমালোচনার ঝড় বইছে। অসংখ টেলিফোনেও জবাব দিতে হচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। আমার খুব ভাল লাগছে অনেকে এই Development Discourse ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন আবার খারাপ লাগছে কারো কারো ব্যক্তিগত আক্রমন এবং অসহিষ্ণু বাক্যবাণ। একজন নিরেট গণতান্ত্রিক মানুষ হিসেবে সবধরনের গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার মন মানসিকতা আমার আছে। তবে আমি সকল পক্ষের কাছে বিশেষ করে যারা আমার পক্ষে অসহিষ্ণু মনোভাব প্রদর্শন করেছেন তাদের কাছেও বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব ইতিবাচক ও সংযত মনোভাব নিয়ে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনাকে সমৃদ্ধ করার। এটি কোন ব্যক্তিগত রেষারেষি বা বিরোধ নয় এটি একটি আদর্শিক চিন্তা, দার্শনিক যুক্তি, ব্যক্তিগত মতামত, উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার ভার্চুয়ার সংলাপ। আমি আমতলী এবং আমতলীর বাইরে যারা যারা আমতলী নিয়ে স্বপ্ন দেখেন এরকম বিজ্ঞজনদেরকে এই সংলাপে অংশগ্রহণের অনুরোধ করব।
প্লেটোর একটি কথা আছে, সংলাপই সভ্যতার ভিত্তি। ফরাসী বিপ্লবের ভিত্তিই তৈরী হয়েছিল চায়ের টেবিলের আলোচনা থেকে। আরব বসন্ত সেতো সোশ্যাল মিডিয়ার অবদান। আমি খুব আশাবাদী মানুষ। স্বপ্নের ফেরীওয়ালা বলতে পারেন। সুতরাং আজকের আলোচনা থেকে আমতলীর সামাজিক রাজনেিতক ক্ষেত্রে গুনগত পরিবর্তনসহ আমতলীর সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এমন স্বপ্ন আমি দেখি।
আপনাদের আলোচনা শুনে আমার বিরুদ্বে আনা কয়েকটি অভিযোগের কিছুটা জবাব দেয়া প্রয়োজন মনে করছি ।প্রথম অভিযোগ, আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং কয়েকটি সভায় আমি রাজনেতিক বক্তৃতা দিয়েছি। একজন এনজিওকর্মী হিসাবে এটা আমি পারি কিনা। আমি বলবার চেষ্টা করেছি, আমতলী একটি প্রাচীন জনপদ। বরগুনা কলাপাড়া এবং গলাচীপা একসময়ে আমতলীর অধিনে ছিল। বরগুনা আজ জেলা, কলাপাড়া জেলা হওয়ার পথে, নিকারে জেলার প্রস্তাবনা বিবেচনাধীন। অন্যদিকে গলাচীপা একটি ব্যবসা সমৃদ্ধ জনপদ। অথচ সে অনুযায়ী আমতলীর উন্নয়ন হয়নি এবং এটি আমতলীর তৎকালীন রাজনেতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা। আমি বলবার চেষ্টা করেছি, সরকার সম্প্রতি খসড়া ৭ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা ঘোষনা করেছেন। এ পরিকল্পনায় কলাপাড়ায় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত হচ্ছে কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর এবং তালতলীর সোনাকাটা। এজন্য সম্ভাব্য বরাদ্দ প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই ৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের গেট ওয়ে হচ্ছে আমতলী। সড়ক পথে আমতলীকে বাদ দিয়ে কোথাও যাওয়ার সুয়োগ নেই। সুতরাং উন্নয়নের দিক থেকে আমতলী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এ কারনেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রের কাছে অনুরোধ করেছিলাম জনপ্রতিনিধি,আইনজীবী, শিক্ষক,সাংবাদিকসহ সকল রাজনেতিক নেতৃত্বকে নিয়ে একটি নাগরিক সংলাপের আয়োজন করার এবং আমতলীর উন্নয়ন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এ সুযোগকে কাজে লাগানোর। আমি বলেছি উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটি এনজিওদের কাজ নয়। এটি যদি আমার রাজনৈতিক বক্তৃতা হয়ে থাকে of course আমি রাজনীতি করি। আর এনজিওকর্মীর রাজনীতি করার আইনগত কোন বাধা নেই।
দ্বিতীয় অভিযোগ, আমি আয়োজকদের রাজনৈতিক পরিচয় না জেনে তাদের সভায় বক্তৃতা করেছি এবং তাদের ভূয়শি প্রশংসা করেছি। আমি সকল তারুণ্যের উচ্ছাসকে সম্মান করি, স্যালুট জানাই। তবে সময় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র জনাব মতিয়ার রহমানের বক্তৃতার কারনে আমারও মনে হয়েছিল বিষয়টি অবহেলা করার মত নয়। সেক্ষেত্রে সময় কতৃপক্ষের নিকট আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা খতিয়ে দেখুন, সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করুন সেরকম অভিযুক্ত কেউ থাকলে তাদেরকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেকে সংগঠিত করুন। আমার লাল- সবুজ চেতনার রংঙে আপনারা টি শার্ট পরেছেন এর মর্যাদা রাখবেন, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
তৃতীয় অভিযোগ হচ্ছে, আরেকটি সংগঠনের মিট দি প্রেস অনুষ্ঠানে আমি তাদের আয় ব্যয়ের হিসাব চেয়েছি। আমি কারো আয় ব্যয়ের হিসাব চাইনি। সাংবাদিক নুহু আলম নবিন সংগঠনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তবে যে কেউ আমাদের আয় ব্যয়ের হিসাব চাইতে পারে, যে আপনি কোথা থেকে টাকা পেয়েছেন, ব্যাংক হিসাব আছে কিনা, টাকা ব্যাংকে জমা হয় কিনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতিমালা আছে কিনা, সরকারের নীতিমালা অনযায়ী ভ্যাট/ট্যাক্স দেন কিনা, কেনা কাটার ক্ষেত্রে পিপিআর/নীতিমালা অনুসরণ করেন কিনা, পেমেন্ট ক্যাশে না চেকে হয়, নিয়মিত অডিট হয় কিনা হলে কত্তৃপক্ষের কাছে জমা হয় কিনা। এগুলো হচ্ছে স্বছতার মাপকাঠি।দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এগুলো অনুসরণ করা প্রত্যেক সংগঠনের জন্য বাধ্যতামূলক। এ মাপকাঠিতে আপনারা স্বচ্ছ হলে আয় ব্যয়ের হিসাব চাওয়ায় এত মাথা ব্যথা কেন। আমাদেরকে এগুলো অনুসরণের পাশাপাশি জংগিদের নিকট থেকে কোন সহযোগিতা নিয়েছি কিনা এজন্য Anti terrorism verification করতে হয়। অন্যদিকে আমাদেরকে দাতা সংস্থা,এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের সবধরণের তথ্য ও ডকুমেন্ট দেখার জন্য উম্মুক্ত এবং ডকুমেন্ট পেতে চাইলে তথ্য অধিকার আইনে সংস্থার তথ্য কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে পারেন।
নাগরিক হিসাবে আমার যেমনি আয় ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে তেমনি নিজেকে স্বচ্ছ প্রমান করার দায়িত্ব রয়েছে। মনে রাখা দরকার এ ক্ষেত্রে সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার,স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়িত্ব অনেক বেশী কারন তারা নাগরিকের ট্যাক্সের টাকায়পরিচালিত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মামনির জন্মদিন: স্বপ্নের চেয়েও বড় হও।

১৯২৮ সন। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু তখন এলাহবাদে। আর ১০ বছরের ইন্দিরা গান্ধী থাকেন হিমালয়ের কোলঘেসে মূসৌরী শহরে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম চিঠি। নেহেরু প্রায়ই মেয়েকে চিঠিতে প্রকৃতি, পৃথিবী ও মানব সভ্যতার বিকাশসহ ভারতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখতেন। ১৯২৯ সনের নভেম্বর মাসে এসব চিঠি নিয়ে মা-মনিকে-বাবা নামে একটি বই প্রকাশিত হলে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় । বর্তমানে এটি ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে এবং রেফারেন্স বুক হিসাবে পড়ানো হয়।কুটনৈ তিক ফারুক চৌধুরীর কুটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা প্রিয় ফারজানাও আমাদের ভ্রমন সাহিত্য ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রত্যেক পিতাই দূরে থাকা সন্তানদের প্রতি কিছু পরামর্শ, কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আগে চিঠি লিখত,এখন তার জায়গায় ইমেইল, মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ।এজন্য নির্দেশনাটাও বেশী । এটা কর, ওটা কর না । সন্ধ্যার আগেই বাসায় বা হলে ফের। রাত কর না। রাজনীতিতে জড়িও না, কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যেও না। কারন অভিভাবকরা সব সময় সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, মেয়ে হলে তো কথাই নেই । সন্তানরা হয়ত ভাবে, আমরা বড় হয়েছি এত ট...

শুভ জম্মদিন ও একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্প ।।

The Wright Brothers  প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির উড়া দেখতেন। দেখতে দেখতে এক সময় পাখির মত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একদিন তাদের স্বপ্ন সফল হল। পাখি হয়ে আকাশে উড়ে নয়, উড়োজাহাজ আবিস্কার করে আকাশ উড়ে। প্রতিটি জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বপ্ন বা vision জীবনকে guide করে, স্বপ্ন ছাড়া জীবন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার মত। তবে এ স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা নয়। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের মতে স্বপ্ন সেটাই যেটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে ঘুমাতে দেয় না। স্বপ্ন দেখানো আরো কঠিন কাজ। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার সারাটা জীবন জুরেই স্বপ্ন ফেরী করেছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ বক্তৃতা আর লেখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড: জাফর ইকবাল। আমাদের সমাজ জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিদিন  Social Media, পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে, চ্যানেলে সাক্ষাতকার, কমিউনিটি রেডিওর টক শোতে এমনকি মাঠে ঘাটে সভা সমাবেশ আর উঠান বৈঠকে যে মানুষটি এ অঞ্চলের তরুন প্রজম্মকে দিন বদলের কথা বলছেন, ...

সুবন্ধি বাধ, একজন জেলা প্রশাসক ও খালের দুপাড়ের অভাগা ৮০ হাজার মানুষ।।

বরগুনা জেলার সকল পর্যায়ের মানুষের খুব  মন খারাপ। ব্যক্তিগতভাবে আমারও। বরগুনা জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক, সাধারণ মানুষের খুব কাছের ব্যক্তি  ড: মুহা: বশিরুল আলম চলে গেছেন। বিভিন্ন  মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে জেলা প্রশাসকের চলে যাওয়ার খবর এখন সুবন্ধি খালের দুপাড়ের ৮০ হাজার মানুষের মুখে মুখে। অনেকদিন ঢাকায় ছিলাম। আজকে অফিসেই দেখা হল চন্দ্রা, কাউনিয়া, লোদা এবং মহিষডাঙ্গার কয়েকজনের সাথে। দেখলাম তাদেরও খুব মন খারাপ। ২০০৮ সন থেকে সুবন্ধি বাধের কারনে আমতলী উপজেলার আমতলী, চাওড়া, হলদিয়া ইউনিয়ন  ও আমতলী পৌরসভার প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কৃষি, পণ্য পরিবহন, জীবন জীবিকা এমনকি পানি ব্যবহার সংক্রান্ত দৈনন্দিন কাজ কর্ম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ সংবাদ শুনে জেলা প্রশাসক স্যার শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি নিজের চোখে সমস্যা দেখেছেন,ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছেন,সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার জন্য মিডিয়া, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে একাধিক বার মতবিনিময় সভা করেছেন। Citizen's  Voice -Barguna এবং Public Service  Innovation Bangladesh এ তুলে ধরে ...