১৯৭৩ সনের মে মাস।
নিজামউদ্দিন আহমেদ মাত্র কয়েক মাস প্রথম জাতীয় সংসদে এমপি নির্বাচিত
হয়েছেন। এসময়েই বঙ্গবন্ধু সরকার পর্যাযক্রমে প্রত্যেক থানায় একটি অডিটরিয়াম
নির্মানের সিদ্ধান্ত নেন। সবচেয়ে তরুণ এমপি হিসাবে প্রাথমিক পর্যায়ে
আমতলীকে এ কর্মসুচির আওতায় আনা হয়। জায়গা নির্ধারণ,অর্থ বরাদ্দ সম্পন্ন করে
নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে অডিটরিয়ামের নির্মান কাজ শুরু হয় । নির্মান কাজের
দায়িত্বে ছিলেন আমতলীর বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার।
প্রথম অডিটরিয়ামের নামকরণ করা হয় আমতলী
টাউন হল। সে অনুযায়ী নিজামউদ্দিন আহমেদের পরামর্শে গাজী আমির হোসেন ও
আতাহার উদ্দিন আকন ইংরেজী ATH দিয়ে টাউন হলের সামনের ডিজাইন করেন। কিন্তু
১৯৭৫ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে নতুন নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু টাউন হল। ১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হলে টাউন হল অসমাপ্ত রেখে
নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় টাউন হলের ভিতরে গাছ
গাছরায় ভরে যায়। ১৯৭৭ সনের দিকে শাহ আলম তালুকদারের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে
চাদা তুলে এখানে একটি ব্যয়ামাগার করা হয়। কিছুদিন এটা ভালভাবে চললেও পরে
বন্ধ হয়ে যায়। ৮০ দশকের প্রথমদিকে আমরা জুনিয়র কয়েকজন টাউন হলের সামনে
খেলার সুযোগ না পেয়ে ভিতরে ব্যাটমিন্টন খেলার ব্যবস্থা করি। ১৯৮৬ সনে আমতলী
উপজেলা পরিষদ টাউন হলটি সংস্কার করার উদ্যোগ নিলে আমতলীর রাজনৈতিক
-সাংস্কৃতিক কর্মীরা আশান্বিত হয়ে উঠেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদ টাউন হলে
সিনেমা হল করার জন্য বরগুনা শ্যামলী সিনেমা হলের মালিক জুলফিকার শাহিনের
সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আমতলীর
সংস্কৃতি কর্মীরা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন করে। কিন্ত
তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদারের অনঢ় অবস্থানের কারনে শেষ
পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে যায় এবং এখানে চালু হয় সুরভি সিনেমা হল।
অনেকদিন সিনেমা হলটি চালু থাকলেও ব্যবসা সফল না হওয়ায় দীর্ঘদিন উপজেলা
পরিষদের ভাড়া বকেয়া রেখে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। পরে মাহবুব উল আলম ঝুন্টু
তালুকদারের পরামর্শে বাহদুর ভাইসহ আমরা কয়েকজন উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে
টাউন হলের স্টেজসহ কিছু সংস্কার কাজ করি। এসময় উদীচী, মুক্তিযোদ্ধ সংসদ এবং
একতা ক্লাব কয়েকটি নাটকের মহড়া করে এবং নাটক মঞ্চস্থ করে। ৯০ দশকের
মাঝামাঝি সময়ে গলাচিপার আবদুল আলিমের মালিাকায় লাভলু সিনেমা হল চালু হয়
।তবে ২০০৪ সনে তৎকালীন এমপি মতিয়ার রহমান তালুকদারের নির্দেশে সিনেমা হলটি
বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘ বিরতির পর কয়েকমাস আগে আবার এখানে লাভলু সিনেমা হল
চালু হয়। কেউ কেউ বলছে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করার জন্য এটা চালু করার চেয়ে
সরকারের উদ্দীপনা সহায়তা বা বিনা সূদে ঋণ সহায়তা পাওয়ার জন্যই সিনেমা হলটি
চালু করা হয়েছে। তবে আমরা আশা করব তারা এটা চলমান রাখবেন।
তবে নতুন প্রজম্মের কাছে এটা লাভলু সিনেমা হল হিসাবেই পরিচিত বঙ্গবন্ধু
টাউন হল হিসাবে নয়। বঙ্গবন্ধু টাউন হলের একটি সাইনবোর্ড টানানো হলেও তাও
হারিয়ে গেছে। ৭৫ এর পরে আওয়ামীলীগ প্রায় ১৭ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও
বঙ্গবন্ধু টাউন হল নতুন প্রজম্মের কাছে বাবা,চাচা, দাদা নানুদের শোনা
গল্প,অন্যদের কাছে কেবলই স্মৃতি ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন