২১ এপ্রিল বিকাল ৩টায় ঢাকার শেরে বাংলা নগরস্থ নির্বাচন কমিশনে বরগুনা ০১
আসনের আমতলী-তালতলী উপজেলাকে নিয়ে জাতীয় সংসদের আলাদা আসনের দাবীতে গণ
শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভাকেট আবদুল মজিদ মল্লিক এবং
ঢাকা বারের সাবেক সম্পাদক এ্যাডভোকেট গাজী শাহ আলমের আবেদনের প্রেক্ষিতে
নির্বাচন কমিশন এ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ মল্লিককে শুনানীতে অংশগ্রহণের
আমন্ত্রন জানালে তিনি শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন এবং আসন পুণর্বিন্যাসের পক্ষে
দালিলিক প্রমানসহ যৌক্তিক দাবী তুলে ধরেন। এসময় জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমতলী
পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান শুনানীতে উপস্থিত ছিলেন।কমিশন সূত্রে জানা
গেছে, আগামী ৩০ এপ্রিল নিবাচন কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা পুণর্বিন্যাস
সংক্রান্ত শুনানীর রায় ঘোষনা করবেন।
বরগুনা জেলার ৬ টি উপজেলা
নিয়ে ৩টি আসন ছিল। বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা ১ আসন, পাথরঘাটা
ও বামনা উপজেলা নিয়ে বরগুনা ২ আসন এবং আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে ছিল
বরগুনা ৩ আসন। ২০০১ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ
হাসিনা এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সন থেকে ২০০৬ পর্যন্ত
আমতলী-তালতলীকে নিয়ে জাতীয় সংসদের-১১২ বরগুনা-০৩ পৃথক আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮
সনে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ভৌগলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিবেচনায়
না নিয়ে কেবলমাত্র লোক সংখ্যার ভিত্তিতে জেলার ৬ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ৩টি
সংসদীয় আসন থেকে ১টি আসন বিলুপ্ত করে ২টি আসন করেছে । বরগুনা এবং
আমতলী-তালতলী উপজেলার মাঝখানে প্রমত্তা পায়রা নদী, বেতাগী এবং বামনা-
পাথরঘাটা উপজেলার মাঝখানে বিশাল বিষখালী নদী থাকা স্বত্বেও ২০০৮ সনে বরগুনা
সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা ১ আসন এবং পাথরঘাটা, বামনা ও
বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা ২ আসন করা হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থা, দুর্গম
যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দুরত্বের কারনে সংসদ সদস্যদের তৃণমূল পর্যায়ে যাওয়া,
উন্নয়ন সম্পর্কে খোজ খবর নেয়া কিংবা তৃণমুল পর্যায়ের কোন জনগণকে স্থানীয়
সমস্যা নিয়ে সংসদ সদস্যর কাছে আসা খুব কষ্টকর হয়ে পরেছে। দুর্যোগ এবং
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুকিতে থাকা রাখাইন উপজাতি অধ্যুষিত উপকুলীয় বরগুনা
জেলার উন্নয়ন বরাদ্দ কমেছে এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে ।
অবহেলিত এ জেলার উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে এখানকার রাজনৈতিক নেতারা শুরু
থেকেই আসন পুণর্বিন্যাসের বিরোধিতা করেন। বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক
মন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ
মল্লিক এবং আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম সরোয়ার ফোরকান আসন পুণর্বিন্যাসের
বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনে আবেদনও করেছিলেন এবং এ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ
মল্লিক নির্বাচন কমিশনের শুনানীতেও অংশগ্রহণ করে যৌক্তিক দাবী তুলে
ধরেছিলেন। ২০০৮ সনে আমতলী প্রেসক্লাব আসন পুণর্বিন্যাসের দাবীতে আমতলীতে
মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেছে। ২০১৭ নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপে সংসদীয়
আসন পুণর্বিন্যাসের বিষয়টি উল্লেখ করলে আমতলী প্রেসক্লাব পুনরায় আসন
পুণর্বিন্যাসের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে এবং মানববন্ধনসহ বিভিন্ন
কর্মসুচিসহ পালন করে। পরে আমতলী রিপোর্টার্স ইউনিটি একই দাবীতে আন্দোলন
অব্যাহত রেখেছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে এ দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেন
বরগুনা জেলার ১০জন বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য। তারা হচ্ছেন বরগুনা-০১
আসনের সাংসদ সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু,
বরগুনা-০২ আসনের সাংসদ শওকত হাসানুর রহমান রিমন, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী, সাবেক সাংসদ ও বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির হিরু, সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার, সাবেক সাংসদ আলহাজ মো.নুরুল ইসলাম মনি, সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার হিরু, সাবেক সাংসদ এ্যাড. আব্দুল মজিদ মল্লিক, সাবেক সাংসদ প্রফেসর ড: আবদুর রহমান খোকন।
বরগুনা-০২ আসনের সাংসদ শওকত হাসানুর রহমান রিমন, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী, সাবেক সাংসদ ও বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির হিরু, সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার, সাবেক সাংসদ আলহাজ মো.নুরুল ইসলাম মনি, সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার হিরু, সাবেক সাংসদ এ্যাড. আব্দুল মজিদ মল্লিক, সাবেক সাংসদ প্রফেসর ড: আবদুর রহমান খোকন।
আমতলী প্রেসক্লাব এবং রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ যারা
সংসদীয় আসন পুণর্বিন্যাসের যৌক্তিক দাবীতে, শুরু থেকে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন
করেছেন, আন্দোলনকে বেগবান করেছেন তাদের সকলকে People's Voice of Amtali
-PVA 'র পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে বাস্তবতা হচ্ছে,আমাদের দাবী যতই যৌক্তিক হোক না কেন সংসদীয় আসন পুণর্বিন্যাসের বিষয়টি
একান্তভাবেই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা এবং নিবাচন
কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়।আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ভৌগলিক
অবস্থান, যোগাযোগ, রাখাইন উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী
জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী আসন বিবেচনা করে আমতলী-তালতলী উপজেলা নিয়ে
আলাদা নির্বাচনী আসনের যৌক্তিক দাবী মেনে নিবেন। আমতলী-তালতলীবাসী অধির
আগ্রহ নিয়ে স্বপ্ন এবং বাস্তবতার দোলা চলে নির্বাচন কমিশনের যুগান্তকারী
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন