লক্ষী বাঈ খ্যাত লক্ষ্ণৌ, দক্ষিনাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আমতলীর মান্নাদে খ্যাত প্রিয় বল্লভ কর্মকারের সুস্থ্যতা কামনা
আমতলী দক্ষিনাঞ্চলের একটি প্রাচীন জনপদ।সামাজিক সাংস্কৃতিকভাবেও ছিল বেশ
অগ্রগামী।ঐতিহ্যবাহী নুরজাহান ক্লাবকে ঘিরে ৫০ এর দশকের নাট্যচর্চা এবং
তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা পর্যায়ে নাট্য প্রতিযোগিতায় আমতলীর থিয়েটার
একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমতলীর সংস্কৃতিকে পৌছে দিয়েছিল খ্যাতির শিখরে।
৮০ দশকে বরগুনা জেলা পর্যায়ে নাট্য প্রতিযোগিতায় আমতলীর উদীচীর ইলেকশন
ক্যারিকেচার, অভিরাম পাওয়া রুটি ভক্ষন এবং ক্ষেপা পাগলার পেচাল এর সফল
মঞ্চায়ন তারই ধারাবাহিকতা। শুধু কি নাটক, সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চার
ক্ষেত্রেও আমতলী ছিল অনেক এগিয়ে। এ মাটিতে জম্ম নিয়েছেন অসংখ্য খ্যাতিমান
শিল্পী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ।
সময়টা ৮০ দশকের প্রথম দিকে। আমরা
তখন স্কুলের ছাত্র। সন্ধ্যার পরে এবিএম চত্বর পাড় হলেই মনে হত আমি কোন
কল্পনার জগতে এসেছি।একদিকে নুরু বারেকের দোকানে, ফয়সল ভাই , হারুন ভাই
কুদ্দুস বিশ্বাস এবং পিছনে মাহবুব উল আলম ঝুন্টু তালুকদার, দেলোয়ার আকনের
বাসায় ফুল ভলিউমে টেপ রেকর্ডারে মান্নাদে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সতিনাথ,
মোহাম্মদ রফির গান বাজত, স্বপন ভাইর বাসায় বাজত ভুপেনের গান।অন্যদিকে অজয়
কর্মকার, ফুল্টু দা,চম্পা দি,মিনাক্ষী দি, শিলা দি,অঞ্জু দি,ইতু এবং পাশেই
প্রিয় বল্লভ কর্মকারের গানের রেওয়াজ।হার্মোনিয়ামের তালে তালে তবলার টুং টাং
শব্দে পরিবেশটাকে মোহনীয় করে তুলতো। মাঝে মাঝে মনাইদার কাপা কাপা গলায়
রবীন্ত্রনাথের দুই বিঘা জমি’র আবৃত্তি একটু ভিন্ন মাত্রা আনত।
ভারতে
উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌকে বল হত The city of Tehzeeb বা শিল্প
সংস্কৃতির শহর। সন্ধ্যার পরে এ শহর নাচ, গান আর বিভিন্ন musical instrument
এর সুরেলা শব্দে নাকি স্বপ্নের জগতে পরিনত হত। ২০০৪ সনে কয়েকদিনের জন্য
স্বপ্নের শহরে যাওয়া এবং থাকার সুযোগ হয়েছিল।বইতে যা পড়েছি সময়ের বিবর্তনে
সেরকম না হলেও ধ্রুপদি সঙ্গিতের সুর, ঘুঙুরের শব্দ,তবলার টুং টাং আমাকে
মোহাবিষ্ট করেছিল। তবে তা কোনভাবেই ছোট সময়ের দেখা আমতলীর সন্ধ্যার পরের
বা গভীর রাতের সেই মোহনীয় পরিবেশের চেয়ে বেশী নয়।
১৯৮৮ সনের অক্টোবর
মাস। আমি তখন দেলোয়ার আকনের সামনে ঘরে থাকি। একদিন গভীর রাতে ' আমি যে
জলসা ঘরে বেলোয়ারী ঝার, নিশি ফুরালে কেহ চায় না আমায় জানি গো আর। গানটি
দেলোয়ার আকনের রেকর্ডে বাজছিল। কিছুক্ষন পরে মনে হল প্রিয় বল্লভ কর্মকারের
বাসা থেকেও গানটি ভেসে আসছে। আমি ভাবছিলাম সেও হয়ত রেকর্ড বাজাচ্ছে। একটু
পরেই মনে হল সেতো নিজেই গাইছে। তখন আমার অবস্থা মান্নাদের ঐ গানটির মত কোন জোসনায় বেশী আলো এই দোটানায় পরেছি।
১৯৯৫ সন। প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক।আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম
প্রিয় বল্লভ কর্মকারের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান করব। আলোচনা করলাম তার সাথে।
তিনি রাজি হলেন তবে এও বললেন আমতলী তে একক সঙ্গীতানুষ্ঠান জমবে
না।Experiment হিসাবে উদ্যোগ নিলাম, অনুষ্ঠান শুরু হল। একটার পর একটা গান
গাইছেন। গোটা হল জুরে Pin drop sinlent .১৪ টি গান গেয়ে থামলেন।অনুষ্ঠান
শেষ মোহাবিষ্ট দর্শক উঠছেন না। নিরবতা ভেংগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান
অধ্যক্ষ শামসুল আলম তালুকদার একটা স্লিপ এগিয়ে দিলেন, আরো দুটো গানের
অনুরোধ। আবার মান্নাদের গান। চোখ বুঝে, তম্ময় হয়ে গান শুনছি আর ভাবছি কে
গায়, প্রিয় বল্লভ কর্মকার না মান্নাদে নিজে?মান্নাদের সাথে প্রিয় বল্লভ
কর্মকারকে কিংবা লক্ষ্ণৌর সাথে আমতলীকে তুলনা করার দুসাহস বা বোকামী কোনটাই
আমার নেই। তবে বলতে পারেন স্রেফ ভ্রান্তিবিলাশ। তবে মানসিক শান্তির জন্য
হোক বা আত্মতৃপ্তির জন্য হোক সেদিন থেকে আমরা তাকে আমতলীর মান্নাদে বলেই
ডাকি এবং ভাবি।
আমতলীর মান্নাদে আমাদের জনপ্রিয় সঙ্গিত শিল্পী বাবু
প্রিয় বল্লভ কর্মকার ছোট্ট একটা দূর্ঘটনার শিকার হয়ে গত বৃহসপতিবার থেকে
খুব অসুস্থ্য ।বর্তমানে বরিশালের রাহাত আনোয়ার খান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আমরা পিভিএ'র পক্ষ থেকে আমতলীবাসীর পক্ষ থেকে তার দ্রুত সুস্থতা কামনা
করছি। আমাদের প্রিয় শিল্পী সুস্থ্য হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসুক, গেয়ে
উঠুক আবার হবে তো দেখা এ দেখাই শেষ দেখা নয়ত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন