সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজ ২৫ মে,বিদ্রোহী কবির ১১৯তম জন্ম বার্ষিকী


আজ শুক্রবার ২৫ মে,২০১৮, বাংলা ১১ জ্যেষ্ঠ,১৪২৫। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্ম বার্ষিকী। দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলাম এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন ।

১৮৯৯ সাল বাংলা ১৩০৬ সনের এইদিনে বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কাজী পরিবারে কবির জন্ম।
বরেণ্য এ কবি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতা কাজী ফকির আহমেদকে হারান । আর্থিক অণটনে পড়ে বই-খাতা রেখে রোজগারে নামতে হয়েছে। কখনও মসজিদের ইমামতি, মাজারের খাদেমগিরি কিংবা চায়ের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এজন্য ছেলেবেলায় সবাই তাকে ‘দুখু মিয়া’ বলে ডাকত ।

আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটির কাজ করার সময় সেখানে কর্মরত দারোগা রফিজ উল্লাহ’র সঙ্গে পরিচয় হয় নজরুলের। তিনি কিশোর নজরুলকে নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে ১৯১৪ সনে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়েই ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন এবং অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে।

বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলাম জনপ্রিয় হয়েছেন কবিতা ও গানে। ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও পুজিবাদী বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিতা ও গান লিখে বিদ্রোহী কবি হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসেন নজরুল ইসলাম। রচনা করেন ‘বিদ্রোহী’র মত কবিতা। তার কবিতায় ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে জেলে পাঠায়। সেখানে বসে রচনা করেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’।

বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলামের আবির্ভাবকে অনেকেই ধুমকেতুর আত্মপ্রকাশ হিসেবে দেখেন।বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি বাংলা সাহিত্যে ভূমিকা রাখেন ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক হিসেবে। তবে সাহিত্যকর্মের উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে তার গান। প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন। ইসলামি গজল,শ্যামা সঙ্গীত লিখে বাংলা গানে নতুন এক ধারার সৃষ্টি করেন তিনি। গান রচনার পাশাপাশি সেগুলোতে সুরারোপ করে সমৃদ্ধ করেছেন সঙ্গীতাঙ্গনকে।নজরুলের লেখা রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ গানটি ছাড়া ঈদই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
কবি ছেলেবেলায় লেটো দলে যোগ দেন, নাটকে অভিনয় করেন এবং পরিণত বয়সে নাটক লিখেন । চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখা , পরিচালনা এবং অভিনয়ও করেছেন।

মুলত লেটো দলেই শুরু হয় তার সাহিত্যচর্চা, যা পরিণতি পায় সৈনিক জীবন থেকে ফেরার পর। সৃষ্টির সময় মাত্র দুই দশক, ১৯২২ থেকে ১৯৪২ সাল। এ স্বল্প সময়ে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নজরুলের অবদান অনন্য।

১৯৪২ সালে কবি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পরেন। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তিনি পিকস ডিজিজে আক্রান্ত। এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরেন । এতে তার সাহিত্যচর্চা পুরোপুরি থেমে যায়।

কোলকাতায় পারিবারিক তত্ত্বাবধানে থাকা কবিকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখা হয় এবং অভিসিক্ত করা হয় জাতীয় কবির মর্যাদায়।
চিরবিদ্রোহী কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘আজান’ কবিতায় তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মামনির জন্মদিন: স্বপ্নের চেয়েও বড় হও।

১৯২৮ সন। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু তখন এলাহবাদে। আর ১০ বছরের ইন্দিরা গান্ধী থাকেন হিমালয়ের কোলঘেসে মূসৌরী শহরে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম চিঠি। নেহেরু প্রায়ই মেয়েকে চিঠিতে প্রকৃতি, পৃথিবী ও মানব সভ্যতার বিকাশসহ ভারতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখতেন। ১৯২৯ সনের নভেম্বর মাসে এসব চিঠি নিয়ে মা-মনিকে-বাবা নামে একটি বই প্রকাশিত হলে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় । বর্তমানে এটি ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে এবং রেফারেন্স বুক হিসাবে পড়ানো হয়।কুটনৈ তিক ফারুক চৌধুরীর কুটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা প্রিয় ফারজানাও আমাদের ভ্রমন সাহিত্য ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রত্যেক পিতাই দূরে থাকা সন্তানদের প্রতি কিছু পরামর্শ, কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আগে চিঠি লিখত,এখন তার জায়গায় ইমেইল, মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ।এজন্য নির্দেশনাটাও বেশী । এটা কর, ওটা কর না । সন্ধ্যার আগেই বাসায় বা হলে ফের। রাত কর না। রাজনীতিতে জড়িও না, কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যেও না। কারন অভিভাবকরা সব সময় সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, মেয়ে হলে তো কথাই নেই । সন্তানরা হয়ত ভাবে, আমরা বড় হয়েছি এত ট...

শুভ জম্মদিন ও একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্প ।।

The Wright Brothers  প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির উড়া দেখতেন। দেখতে দেখতে এক সময় পাখির মত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একদিন তাদের স্বপ্ন সফল হল। পাখি হয়ে আকাশে উড়ে নয়, উড়োজাহাজ আবিস্কার করে আকাশ উড়ে। প্রতিটি জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বপ্ন বা vision জীবনকে guide করে, স্বপ্ন ছাড়া জীবন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার মত। তবে এ স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা নয়। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের মতে স্বপ্ন সেটাই যেটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে ঘুমাতে দেয় না। স্বপ্ন দেখানো আরো কঠিন কাজ। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার সারাটা জীবন জুরেই স্বপ্ন ফেরী করেছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ বক্তৃতা আর লেখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ড: জাফর ইকবাল। আমাদের সমাজ জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিদিন  Social Media, পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে, চ্যানেলে সাক্ষাতকার, কমিউনিটি রেডিওর টক শোতে এমনকি মাঠে ঘাটে সভা সমাবেশ আর উঠান বৈঠকে যে মানুষটি এ অঞ্চলের তরুন প্রজম্মকে দিন বদলের কথা বলছেন, ...

সুবন্ধি বাধ, একজন জেলা প্রশাসক ও খালের দুপাড়ের অভাগা ৮০ হাজার মানুষ।।

বরগুনা জেলার সকল পর্যায়ের মানুষের খুব  মন খারাপ। ব্যক্তিগতভাবে আমারও। বরগুনা জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক, সাধারণ মানুষের খুব কাছের ব্যক্তি  ড: মুহা: বশিরুল আলম চলে গেছেন। বিভিন্ন  মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে জেলা প্রশাসকের চলে যাওয়ার খবর এখন সুবন্ধি খালের দুপাড়ের ৮০ হাজার মানুষের মুখে মুখে। অনেকদিন ঢাকায় ছিলাম। আজকে অফিসেই দেখা হল চন্দ্রা, কাউনিয়া, লোদা এবং মহিষডাঙ্গার কয়েকজনের সাথে। দেখলাম তাদেরও খুব মন খারাপ। ২০০৮ সন থেকে সুবন্ধি বাধের কারনে আমতলী উপজেলার আমতলী, চাওড়া, হলদিয়া ইউনিয়ন  ও আমতলী পৌরসভার প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কৃষি, পণ্য পরিবহন, জীবন জীবিকা এমনকি পানি ব্যবহার সংক্রান্ত দৈনন্দিন কাজ কর্ম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ সংবাদ শুনে জেলা প্রশাসক স্যার শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি নিজের চোখে সমস্যা দেখেছেন,ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছেন,সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার জন্য মিডিয়া, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে একাধিক বার মতবিনিময় সভা করেছেন। Citizen's  Voice -Barguna এবং Public Service  Innovation Bangladesh এ তুলে ধরে ...